মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

লিসবন, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২২


যথাযথ মর্যাদা ও ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পর্তুগাল-এর রাজধানী লিসবন-এ  (সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ তারিখ) বাংলাদেশ দূতাবাস মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে। সকালে চান্সারি প্রাঙ্গনে রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান দুতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারির উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচীর সূচনা করেন। পরবর্তীতে ক্যাম্প মার্ত্রিস দে পাত্রিয়া পার্কে স্থাপিত স্থায়ী শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে, স্থানীয় প্রশাসন, জুন্তা ফ্রেগেসিয়া দে আরোইস সহযোগিতায় দূতাবাস মূল কর্মসূচির আয়োজন করে। 

 মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ ব্যানার, পোস্টার ও বর্ণমালা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এছাড়াও শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ভাষা শহিদদের এক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূত তারিক আহসানজুন্তা ফ্রেগেসিয়া দে আরোইস এর প্রেসিডেন্ট, পর্তুগাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সহ দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যদের ভাষা শহিদগণের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মূল কর্মসূচির সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহিদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর মহান শহিদ দিসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যের ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।  বক্তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং মানবাধিকার, সাম্য, মুক্তি সহ প্রভৃতি মূল্যবোধের উন্নয়নে ভাষা শহিদদের অনন্যসাধারণ অবদানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। জুন্তা ফ্রেগেসিয়া দে আরোইস এর প্রেসিডেন্ট মিজ মেদেলেইনা নাতভিদাদ তাঁর বক্তৃতায় ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক যেকোন উদ্যোগে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সাথে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। 

রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তার বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তৎকালীন উদীয়মান তরুণ রাজনৈতিক নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যিনি ভাষা আন্দোলনে তরুণদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন যে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি  বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবজ্বল মাইলফলক যা বাঙালি জাতিকে তাদের অধিকার আদায়ের বৈধ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জিত হয়।  তিনি আরও বলেন, মাতৃভাষার সার্বজনীন অধিকারের জন্য ভাষা শহিদদের এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেবার লক্ষ্যে  ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। তিনি আরও বলেনএই বিশ্বের ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষা এবং বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষা রক্ষাকল্পে বাংলাদেশ ২০১০ সালে ইউনেস্কো-অধিভুক্ত গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। তরুণ প্রজন্মকে পর্তুগিজ ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষা চর্চায় উৎসাহিত করতে, রাষ্ট্রদূত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও, তিনি ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগদেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদার আদর্শকে ধারণ করতে সমবেত সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন।

আলোচনা শেষে, সংক্ষিপ্ত  সাংস্কৃতিক পর্বে  সমবেতকন্ঠে ’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে দেশীয় খাবারের মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গকে আপ্যায়িত করা হয়।


------X------


Download Press Release