সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
লিসবন, ২২ মার্চ ২০২৩
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখরতার সাথে বাংলাদেশের ৫২ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস । এ উপলক্ষ্যে ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় একটি অভিজাত হোটেলে (হোটেল ম্যারিয়ট, লিসবন)-এ দূতাবাস এক অভ্যর্থনার আয়োজন করে। এই বছর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ, পবিত্র মাহে রমজান ও সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পরামর্শক্রমে দূতাবাস বাংলাদেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসটি ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখে উদযাপন করেছে।
বাংলাদেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী লিসবন ম্যারিয়ট হোটেলের অভ্যর্থনা হলটি ফুল, রঙিন ব্যানারসহ রোল আপ ব্যানার দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। অভ্যর্থনা হলের প্রবেশদ্বারে উপযুক্ত স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশদ্বারের নিকটে হোটেলের এট্রিয়ামে বাংলাদেশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দৃশ্য সম্বলিত ‘Beautiful Bangladesh’ শিরোনামের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে দূতাবাস। পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ও তাঁর সহধর্মিনী এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন সস্ত্রীক আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান।
বাংলাদেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে পর্তুগাল সরকারের সমতা ও অভিবাসন বিষয়ক সচিব (প্রতিমন্ত্রী) ড. ইসাবেল আলমেইদা রদ্রিগেস; পর্তুগাল-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের সহ-সভাপতি মি. পেদ্রো আনাস্তাসিও; এবং রাষ্ট্রচার প্রধান রাষ্ট্রদূত জর্জ সিলভা লোপেজ। এই প্রথম পর্তুগালের কোনো প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার অতিথি লিসবনে আয়োজিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তাছাড়াও পর্তুগালে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক মিশনের প্রধান, পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, সাংবাদিক এবং পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশীদের নেতৃস্থানীয় ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ (লিসবন, পোর্তো এবং পর্তুগালের অন্যান্য অংশ থেকে আগত) দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ পরিবারের সদস্যগণসহ এই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও পর্তুগালের জাতীয় সঙ্গীত ক্রমান্বয়ে পরিবেশিত হয়। রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের চরম আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শান্তি, উন্নয়ন, নিরস্ত্রীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন, ধর্মীয় মধ্যপন্থা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান গত এক বছরে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতির বিষয়টিও তুলে ধরেন যার মধ্যে অন্যতম হলো ২য় জাতিসংঘ সমুদ্র সম্মেলনের সাইড লাইনে অনুষ্ঠিত দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক; পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীদের পর্যায়ে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক সফর বিনিময়; প্রথম পর্তুগাল-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠন; পর্তুগিজ সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর; ২০২১ থেকে ২০২২ সময়কালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি।
পর্তুগাল সরকারের সমতা ও অভিবাসন বিষয়ক সচিব (প্রতিমন্ত্রী) ড. ইসাবেল আলমেইদা রদ্রিগেস বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল মানুষকে অভিনন্দন জানান। তিনি আরও বলেন পর্তুগালের বেশ কয়েক বছর পূর্ব থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিগত বছরগুলোতে গভীরতর হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীরতর হবে। তিনি পর্তুগালের অর্থনীতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবদানের প্রশংসা করেন এবং পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জীবনযাত্রা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে মিলে কাজ করার প্রত্যায় প্রকাশ করেন।
তারপর রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান, পর্তুগাল সরকারের সমতা ও অভিবাসন বিষয়ক সচিব (প্রতিমন্ত্রী) ড. ইসাবেল আলমেদা রদ্রিগেস, পর্তুগাল-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মি. পেদ্রো আনাস্তাসিও; রাষ্ট্রাচার প্রধান রাষ্ট্রদূত জর্জ সিলভা লোপেস এবং কূটনীতিক কোরের ডীন জানাব আইভো স্কাপোলোকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন যা অতিথিদের মধ্যে অন্যান্য মিষ্টান্ন খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়।
তাছাড়াও অনুষ্ঠানের শেষ দিকে বর্ণাঢ্য নৃত্য পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। আমন্ত্রিত বাংলাদেশী নৃত্য শিল্পীগণ “শোনো একটি মুজিবরের থেকে” ও হাসন রাজার একটি লোকগীতি এবং একটি দেশাত্মবোধক গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন, যা অতিথিদের মুগ্ধ করে।
সাংস্কৃতিক পর্বের পরে, অভ্যর্থনায় আগত অতিথিদেরকে বাংলাদেশী ও পর্তুগীজ ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয় । বাংলাদেশী দেশাত্মবোধক যন্ত্রসংগীতের আবহে অতিথিরা খাবার, বিশেষ করে বাংলাদেশের মিষ্টান্ন উপভোগ করেন। বুফে ডিনারের সময় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অভ্যর্থনার পুরো আয়োজনটি লিসবনে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলে, অতিথিগণ অভিমত ব্যক্ত করেন।
--X--
Published Media